বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ইস্যু হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দরকার গুণগত মানের অবকাঠামো। এছাড়া বিদ্যুতের মূল্য কমানো এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। এসব ঠিক থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। রোববার বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিনে এসব চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিদেশি উদ্যোক্তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলেন। গ্যাস স্বল্পতা নিয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, বিনিয়োগের জন্য নিরাপত্তাজনিত বিষয়টিও বড় একটি ইস্যু।
এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাতারসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গ্যাস সরবরাহ করতে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিজনেস সামিটে উপস্থিত সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারণী ব্যক্তি বিদেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ হচ্ছে কাজের বয়সের। বিশ্বের নবম বৃহত্তম ক্রেতার বাজার এখানে। শুধু কোভিড-১৯ বাধা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এ গতিধারায় ২০২৯ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশে ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগের সুযোগ’ শিরোনামে প্যানেল আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এই প্যানেল আলোচনা ছাড়াও সামিটে আরও সাতটি সহযোগী সেমিনার হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল ইকোনমি, কনজুমার্স গুডস ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, অ্যাপারেল টেক্সটাইল এবং বিদ্যুৎ ও জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্য।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে চীনের ইয়াংগন গ্রুপের চেয়ারম্যান কি হক সাং বলেন, বিনিয়োগকারীরা প্রথমে বাজার দেখবে। এরপর দেখবে চাহিদা। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার সংকটের মধ্যে পড়েছে। এসব বিষয় এখন ভাবাচ্ছে।
প্যানেল আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়াতে সময়োপযোগী নীতিসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি বাড়ানো এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রপ্তানিতে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ভ্যাট ও কর সুবিধা, শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনি মেশিনারিজ আমদানিতে কর সুবিধা, ব্যাংকিং অগ্রাধিকার ও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বে হালাল পণ্যের একটি বড় বাজার রয়েছে। সেখানে আমাদের হালাল পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে। হালাল পণ্যের সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের কাজ চলছে। এটি গঠন হলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
প্যানেল আলোচনায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, একের পর এক বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। যে কারণে প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। এর ইতিবাচক মূল্যায়ন হিসাবে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে। বিশ্বের বেশির ভাগ গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। এ দেশে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা হয়েছে। নিরাপদ ও কর্মীবান্ধব পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছেন। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য শ্রেষ্ঠ স্থান। আসুন, যোগ দিন আমাদের সঙ্গে।
প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। সেখানে অংশ নেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ, মারুবেনি করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও মাসুমি কাকিনোকি, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রোমশন অথরিটির ডিজি জং ওন কিম, কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের চিফ এক্সিকিউটিভ রোসি গন্টাজিব্রোক প্রমুখ।
কনজুমার্স গুডস : ‘কনজুমার গুডস লিভারাইজিং গ্রোয়িং মিডিল অ্যান্ড এফ্লোয়েন্ট ক্লাস ফর এ ভাইব্রান্ট কনজুমার গুড সেক্টর’ শীর্ষক আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের রপ্তানির সিংহভাগ দখল করে আছে তৈরি পোশাক খাত। এর পাশাপাশি পাট-পাটজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষিপণ্য, প্লাস্টিক পণ্য এবং সেবা খাত রপ্তানি বাড়াতে খুবই সম্ভাবনাময়। এসব খাতকেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।