ভারতের মেঘালয়ে যাতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, কিংবা প্রসেসড ও হিমায়িত খাবারের মতো পণ্য সরাসরি আমদানি করতে পারে, বাংলাদেশে সরকারের কাছে সেই অনুরোধ জানিয়েছে তারা। বুধবার (১৮ মে) ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এই প্রস্তাব দেন।
মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকলেও বেশিরভাগ অংশেই কোনও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। ডাউকি-তামাবিল সীমান্ত ছাড়া আর কোনও পথে বাংলাদেশ-ভারতের মানুষের যাতায়াতও তেমন নেই। ফলে মেঘালয় বিপুল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ থেকে কিনলেও তার বেশি আসে গুয়াহাটি, কলকাতা বা ত্রিপুরা হয়ে।
এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে মেঘালয় এখন চাইছে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে নিজেরাই আমদানি করতে, যাতে খরচ অনেক কম পড়বে ও মেঘালয়ে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদাও বাড়বে। মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মেঘালয়ের সঙ্গে ‘কানেকটিভিটি’ এবং ‘পিপল-টু-পিপল কন্টাক্ট’ (মানুষে মানুষে সংযোগ) বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত মুস্তাফিজুর রহমান।
সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়েছে যে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলছেন, ঢাকার কাছে ভারতের নর্থ-ইস্ট হয়ে উঠেছে ‘নতুন কলকাতা’। অর্থাৎ আগে বাংলাদেশের কাছে কলকাতা যেমন বিরাট গুরুত্ব পেতো, এখন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোও দ্রুত সেই জায়গায় চলে আসছে। আর এরমধ্যে মেঘালয় অবশ্যই অগ্রগণ্য।
প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই কেবল দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শেখ হাসিনার সফরে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে যে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতেও উপস্থিত ছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।
মেঘালয় সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার সেই ধারাবাহিকতাতেই শিলং সফরে গিয়েছিলেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান।
তিনি মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাকে জানান, বাংলাদেশ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বের সঙ্গে রেল, সড়ক ও নদীপথে সংযোগ বাড়াতে খুবই উৎসাহী। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে যদি মেঘালয়ের বিনিয়োগকারীরা লগ্নি করতে চান, তাহলে সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলেও রাষ্ট্রদূত মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে একই সফরে রাষ্ট্রদূত আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ট্রেড ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।
সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনগুলোর কর্মকাণ্ডও সরেজমিন ঘুরে দেখবেন হাইকমিশনার। মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি-তামাবিলে তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনায় বসবেন। ডাউকি-তামাবিল দিয়ে যে পর্যটকরা যাতায়াত করবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যেও নানা পদক্ষেপ গৃহীত হবে।