ঋণদাতার আয়ের হিসাব ব্যাংকে

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করেছেন, সেটি সফলও হয়েছে। কিন্তু যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই ঋণ আর শোধ করেননি। শুধু দফায় দফায় পুনঃ তফসিল করে ঋণ নিয়মিত রেখেছেন। এমন ব্যবসায়ীদের আটকাতে এবার নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে যে ব্যাংক কোনো প্রকল্পে ঋণ দেয়, সে ব্যাংকেই খুলতে হবে ওই ব্যবসার আয় বা বিক্রির হিসাব। তখন সে হিসাব থেকেই শোধ হবে কিস্তির টাকা। তাতে সময়মতোই প্রকল্পের ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এর ফলে প্রকল্প ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। শুধু ব্যবসা খারাপ হলেই কেবল ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে।
দেশের বেসরকারি খাতের বড় প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই হয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অর্থায়নে। এখন খেলাপি ঋণের হার এসব ব্যাংকেই বেশি। আবার এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের বড় অংশ হচ্ছে প্রকল্প ঋণ।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘প্রকল্প ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রকল্পের আয়ের হিসাব খোলার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে’। এই নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংক বিভিন্ন খাতে প্রকল্প স্থাপনের জন্য ঋণ প্রদানের পর ওই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত আয় দ্বারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করাতে একই ব্যাংকে এসক্রো হিসাব খোলা হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু কিছু ঋণগ্রহীতা যে ব্যাংক থেকে প্রকল্প ঋণ গ্রহণ করছেন, সে ব্যাংকে ওই প্রকল্পের আয় জমা করছেন না। ফলে একদিকে যেমন ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃক যথাযথভাবে ঋণটি তদারকি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ জন্যই নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা সংগ্রহ করার জন্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকে ওই প্রকল্পের নামে এসক্রো হিসাব বা যে নামেই হোক না কেন হিসাব খুলতে হবে। জোটবদ্ধ হয়ে অর্থায়ন করা হলে সেই প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা সংগ্রহ করার জন্যও লিড ব্যাংকে (ঋণ আয়োজনকারী) হিসাব খুলতে হবে। ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককে ঋণ আদায় নিশ্চিত করার জন্য এই হিসাবে প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা নিয়মিত জমা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে হবে। প্রকল্পের আয় ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির তুলনায় বেশি হলে অতিরিক্ত অংশ জমা করার জন্য লিড ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ করে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নামে হিসাব খোলা যাবে।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের অনেক ব্যবসায়ীই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প করেছেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁরা সেই ঋণ আর পরিশোধ করেননি। অথচ এসব প্রকল্প খুব ভালো করেছে বা করছে। এসব ব্যবসায়ী যে ব্যাংক থেকে প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ নিয়েছেন, সেটিতে ব্যবসার হিসাব না খুলে অন্য ব্যাংকে তা খুলে টাকা জমা করেছেন। সেই টাকায় এবং অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরে আরও প্রকল্প করেছেন। এভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন অনেকে। অথচ প্রকল্পের ঋণ এখনো বকেয়া রয়ে গেছে। এতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে গত বছরের জুনের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি ৩৯ টাকা, যা সেপ্টেম্বরের শেষে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এদিকে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ জন্য সরকার এখন কিছু ব্যাংককে একীভূত করার কথা ভাবছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে বেসরকারি উদ্যোগে ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি’ গঠনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে গত বুধবার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন জোরদারে কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করেছেন, সেটি সফলও হয়েছে। কিন্তু যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই ঋণ আর শোধ করেননি। শুধু দফায় দফায় পুনঃ তফসিল করে ঋণ নিয়মিত রেখেছেন। এমন ব্যবসায়ীদের আটকাতে এবার নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে যে ব্যাংক কোনো প্রকল্পে ঋণ দেয়, সে ব্যাংকেই খুলতে হবে ওই ব্যবসার আয় বা বিক্রির হিসাব। তখন সে হিসাব থেকেই শোধ হবে কিস্তির টাকা। তাতে সময়মতোই প্রকল্পের ঋণ শোধ হয়ে যাবে। এর ফলে প্রকল্প ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। শুধু ব্যবসা খারাপ হলেই কেবল ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে।
দেশের বেসরকারি খাতের বড় প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই হয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অর্থায়নে। এখন খেলাপি ঋণের হার এসব ব্যাংকেই বেশি। আবার এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের বড় অংশ হচ্ছে প্রকল্প ঋণ।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘প্রকল্প ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রকল্পের আয়ের হিসাব খোলার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে’। এই নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংক বিভিন্ন খাতে প্রকল্প স্থাপনের জন্য ঋণ প্রদানের পর ওই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত আয় দ্বারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করাতে একই ব্যাংকে এসক্রো হিসাব খোলা হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু কিছু ঋণগ্রহীতা যে ব্যাংক থেকে প্রকল্প ঋণ গ্রহণ করছেন, সে ব্যাংকে ওই প্রকল্পের আয় জমা করছেন না। ফলে একদিকে যেমন ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃক যথাযথভাবে ঋণটি তদারকি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ জন্যই নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা সংগ্রহ করার জন্য ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকে ওই প্রকল্পের নামে এসক্রো হিসাব বা যে নামেই হোক না কেন হিসাব খুলতে হবে। জোটবদ্ধ হয়ে অর্থায়ন করা হলে সেই প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা সংগ্রহ করার জন্যও লিড ব্যাংকে (ঋণ আয়োজনকারী) হিসাব খুলতে হবে। ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককে ঋণ আদায় নিশ্চিত করার জন্য এই হিসাবে প্রকল্পের আয় বা বিক্রির টাকা নিয়মিত জমা হচ্ছে কি না, তা তদারকি করতে হবে। প্রকল্পের আয় ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির তুলনায় বেশি হলে অতিরিক্ত অংশ জমা করার জন্য লিড ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ করে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নামে হিসাব খোলা যাবে।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের অনেক ব্যবসায়ীই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প করেছেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁরা সেই ঋণ আর পরিশোধ করেননি। অথচ এসব প্রকল্প খুব ভালো করেছে বা করছে। এসব ব্যবসায়ী যে ব্যাংক থেকে প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ নিয়েছেন, সেটিতে ব্যবসার হিসাব না খুলে অন্য ব্যাংকে তা খুলে টাকা জমা করেছেন। সেই টাকায় এবং অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরে আরও প্রকল্প করেছেন। এভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন অনেকে। অথচ প্রকল্পের ঋণ এখনো বকেয়া রয়ে গেছে। এতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭ গুণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে গত বছরের জুনের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি ৩৯ টাকা, যা সেপ্টেম্বরের শেষে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এদিকে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ জন্য সরকার এখন কিছু ব্যাংককে একীভূত করার কথা ভাবছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে বেসরকারি উদ্যোগে ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি’ গঠনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে গত বুধবার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন জোরদারে কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিজনেস দর্পণ
বিজনেস দর্পণhttp://businessdorpon.com
Empowering your business decisions with reliable news and data.

লেখক থেকে আরো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Advertismentspot_img

সাম্প্রতিক সংবাদ

আরও কত বছর চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে...

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকার মান কমে যাওয়ার পেছেনে বেশ কিছু...

প্যারিসে গাড়ির প্রদর্শনীতে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির আধিপত্য

চীনা পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে বরাবরই শুল্ক আরোপের চর্চা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এই ধারাবাহিকতায় চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে আগামী পাঁচ বছরে শুল্ক ১০...

সর্বশেষ খবরের সাথে আপ টু ডেট থাকতে চান?

আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই! আপনার বিবরণ পূরণ করুন এবং আমরা আমাদের সকল আপডেট আপনাকে জানাবো।