কয়েক বছর ধরে খেজুর আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর রোজার আগে আজোয়া ও মেডজুলের মতো দামি খেজুর প্রতি কেজি ৯৫ সেন্ট থেকে ১ মার্কিন ডলারে আমদানির ঘোষণা দিয়েছিলেন অনেক ব্যবসায়ী।
অথচ বাজারে এসব খেজুর বিক্রি হয়েছিল এক থেকে দেড় হাজার টাকায় কেজি দরে। মূলত শুল্ক-কর ফাঁকি দিতেই আমদানি মূল্য কম দেখিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছর চট্টগ্রামে খেজুরের বাজারে জেলা প্রশাসনের অভিযানে আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক কম দেখিয়ে শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর টনক নড়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তারা খেজুর আমদানিতে করভার বাড়িয়ে দেয়।
আবার শুল্ক-কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম আমদানি মূল্যও বেঁধে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি খেজুর আমদানিতে এখন করভার ৬৬ থেকে ২৬৫ টাকা। তাতে খেজুর আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তবে এই রাজস্ব আদায়ের চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর রোজার আগে খেজুর আমদানিতে কম মূল্য ঘোষণার অভিযোগ ওঠার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাধারণ, মধ্যম ও উত্তম মানের খেজুরের শুল্কায়নমূল্য নির্ধারণ করে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম আদেশ জারি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত ২৯ নভেম্বর পাঁচ ক্যাটাগরিতে আবারও খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তৃতীয় দফায় গত ১৮ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে তাজা খেজুরের সঙ্গে শুকনো খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে তাজা খেজুর আমদানিতে করভার ছিল ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে করভার বাড়ানো হয়েছে। তাতে তাজা খেজুরে এখন করভার বেড়ে হয়েছে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর মিলিয়ে ১০ শতাংশ শুল্ক হার ছিল। অর্থাৎ ১০০ টাকার খেজুর আমদানি করলে শুল্ক-কর দিতে হতো ১০ টাকা।
চলতি অর্থবছরে সেই শুল্ক হার বেড়েছে। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে।
আজোয়া, মেডজুল, মরিয়মের মতো উন্নত মানের খেজুরে এখন শুল্কায়ন হচ্ছে প্রতি কেজি ৪ ডলার আমদানি মূল্য ধরে। তাতে কেজিপ্রতি শুল্ক-কর আদায় করা হচ্ছে ২৬৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বাজারে খেজুর বিক্রির সময় দাম নির্ধারণে এ শুল্ক-করকেও আমদানি খরচে যুক্ত করছেন। অর্থাৎ এসব খেজুরের প্রতি কেজিতে নির্ধারিত ২৬৫ টাকা শুল্ক-কর পরোক্ষভাবে ভোক্তাকে দিতে হচ্ছে।
এর বাইরে কিছু খেজুরের শুল্ক-কর হিসাব করা হচ্ছে প্রতি কেজি ২ ডলার ৭৫ সেন্ট আমদানি মূল্য ধরে। তাতে করভার দাঁড়াচ্ছে ১৮১ টাকা। আর কেজিতে আড়াই ডলারে শুল্কায়ন করা খেজুরে এই করভার ১৬৪ টাকা। এর বাইরে বস্তায় আসা নিম্নমানের খেজুরে করভার ৬৬ টাকা।
প্রায় তিন মাস আগে বস্তায় আসা প্রতি কেজি জায়েদি খেজুরের জন্য শুল্ক দিতে হতো ১০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৭২ টাকা। এ ছাড়া কার্টনে করে আসা জায়েদি খেজুরের জন্য তিন মাস আগে শুল্ক-কর দিতে হতো ১১০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ২৮০ টাকা। এভাবে সব জাতের খেজুরে আমদানি শুল্ক বেড়েছে।
বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জায়েদি, মাশরুখ মারিয়াম, নাকাল, দাব্বাস, সাফারি ও সুগাই নামের খেজুর। তিন মাস আগেও এসব খেজুরের দাম ছিল ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এসব খেজুরের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। গত শনিবার চট্টগ্রামের বাজারে প্রতি কেজি দাব্বাস ৩৮০ টাকা, মাশরুখ ৫০০, সাফারি ৮০০, সৌদি আরবের আম্বর ৮০০, নাকাল ৩৫০ ও ছড়া খেজুর ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত বছর রোজায় প্রতি কেজি আজোয়া খেজুর বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এ ছাড়া জায়েদি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মাশরুখ মারিয়াম ৪০০ থেকে ৫০০, কালো মারিয়াম ৫০০ থেকে ৫৫০, নাকাল ২৫০ থেকে ২৬০, দাব্বাস ২০০ থেকে ২৫০, মধ্যম মানের সাফারি ২৫০, সুগাই ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
১৯ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে খেজুরের বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য ও আমদানি শুল্ক কমাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন রমজানে খেজুরের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে বর্তমান শুল্ক হারের বদলে আগের শুল্ক হার কার্যকরের কথা বলা হয় চিঠিতে।