ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনের। এরপর ৮ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। নতুন সরকার গঠনের পরই ১৬ বছরের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিকার চাইতে একসাথে ফুসে উঠে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। যার বড় ঢেউ লেগেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে।।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের এই আন্দোলনে, গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় কারখানায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিলে বাধ্য হন মালিকপক্ষ। তবে আসার কথা হচ্ছে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
প্রশ্ন উঠেছে এই অস্থিতিশীলতা কি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ কি অবস্থান আরো সংকুচিত করবে। এতে প্রতিযোগী দেশগুলো কি সুবিধা পাবে।
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্যা ইকোনমিস্ট। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়। ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা তৈরি করে বাংলাদেশ।
এরপর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে এ খাতে কর্মরত আছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক।যাদের বেশিরভাগই নারী। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পে যে উন্নতি দেখিয়েছে তা এই শিল্পের জন্য দৃষ্টান্ত।
ছাত্রদের আন্দোলনে মাসব্যাপী ক্র্যাক ডাউন চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। কার্যকর ছিল কারফিউর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত। এর ফলে ব্যাপক হারে কমেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলেও, এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। অন্য অনেকের মতো দাবি আদায় করতে রাস্তায় নেমেছে তৈরি পোশাক খাদের শ্রমিকরা। এছাড়া বিদ্যুতের সংকট ও গ্যাসের ঘাটতির কারণে, কারখানাগুলোর কার্যক্ষমতা অনেকাংশেই কমে গেছে। এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চলতি বছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। যা তৈরি পোশাক শিল্পে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান এনে দিয়েছে। তবে এবছর চলমান অস্থিরতায় বিঘ্নিত হয়েছে এই শিল্পের কার্যক্রম। একই জায়গায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ভারতের পোশাক রপ্তানি এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ুর ত্রিপুরা শহর ভিত্তিক পোশাক উৎপাদনকারী ৫৪ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নতুন পোশাক উৎপাদনের কার্যাদেশ পেয়েছে। এছাড়াও দিল্লির বাইরে অবস্থিত আরেকটি অংশ বলছে, তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম যারা থেকে চলতি বছরের আগস্টে ১৫ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায়। এসব কাজ তাদের কাছে চলে এসেছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে চলমান অস্থিরতা কি ভারতের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিশ্লেষক মেহেদী মাহবুব বলেন,
যে কারো জন্যই পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের আধিপত্য খর্ব করা কঠিন হবে। কারণ বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদী। কারখানাগুলো ইতিমধ্যেই আবার চালু হতে শুরু করেছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখনও তার প্রতিযোগিদের তুলনায় বেশি সুবিধা ভোগ করছে। শ্রম খরচ অন্যান্য জায়গার তুলনায় কম। ভারতের বিপরীতে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পায়। সর্বোপরি বাংলাদেশ এখনো তার বড় অর্ডারগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত।
এই মুহূর্তে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য ভারতের নেই বলে জানিয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রপ্তানির মূল্য কমেছে ১৫ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ ।
এদিকে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ভারতের পোশাক খাতের এই দুরবস্থার পেছনে সুরক্ষাবাদী নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। ভারতে পোশাক ও বস্ত্র আমদানিতে গড় শুল্ক ২০১৭ সালের পর ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে পোশাক উৎপাদনের খরচও বেড়েছে।
অন্যদিকে চীনের স্বল্পমূল্যের পোশাক উৎপাদনে যে ভাটা শুরু হয়েছে। সেটাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ হতে পারে । তবে এখানেও ভারতকে বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে, চীনের স্বল্পমূল্যে পোশাক উৎপাদন কমে যাওয়ায়, সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। সেই সঙ্গে পোশাকের মান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরের দিকে যেতে হলে, মানের উন্নতি করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই লক্ষ্য আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। তবে সেটা করতে হলে অর্থনীতিতে আরো বৈচিত্র আনতে হবে
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় আধিপত্য কী ভারতের হাতে চলে যাবে?
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনের। এরপর ৮ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। নতুন সরকার গঠনের পরই ১৬ বছরের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিকার চাইতে একসাথে ফুসে উঠে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। যার বড় ঢেউ লেগেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে।।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের এই আন্দোলনে, গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় কারখানায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিলে বাধ্য হন মালিকপক্ষ। তবে আসার কথা হচ্ছে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
প্রশ্ন উঠেছে এই অস্থিতিশীলতা কি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ কি অবস্থান আরো সংকুচিত করবে। এতে প্রতিযোগী দেশগুলো কি সুবিধা পাবে।
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্যা ইকোনমিস্ট। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়। ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রথম রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা তৈরি করে বাংলাদেশ।
এরপর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে এ খাতে কর্মরত আছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক।যাদের বেশিরভাগই নারী। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পে যে উন্নতি দেখিয়েছে তা এই শিল্পের জন্য দৃষ্টান্ত।
ছাত্রদের আন্দোলনে মাসব্যাপী ক্র্যাক ডাউন চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। কার্যকর ছিল কারফিউর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত। এর ফলে ব্যাপক হারে কমেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলেও, এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। অন্য অনেকের মতো দাবি আদায় করতে রাস্তায় নেমেছে তৈরি পোশাক খাদের শ্রমিকরা। এছাড়া বিদ্যুতের সংকট ও গ্যাসের ঘাটতির কারণে, কারখানাগুলোর কার্যক্ষমতা অনেকাংশেই কমে গেছে। এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চলতি বছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
গত বছর বাংলাদেশ ৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। যা তৈরি পোশাক শিল্পে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান এনে দিয়েছে। তবে এবছর চলমান অস্থিরতায় বিঘ্নিত হয়েছে এই শিল্পের কার্যক্রম। একই জায়গায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ভারতের পোশাক রপ্তানি এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ুর ত্রিপুরা শহর ভিত্তিক পোশাক উৎপাদনকারী ৫৪ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নতুন পোশাক উৎপাদনের কার্যাদেশ পেয়েছে। এছাড়াও দিল্লির বাইরে অবস্থিত আরেকটি অংশ বলছে, তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম যারা থেকে চলতি বছরের আগস্টে ১৫ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায়। এসব কাজ তাদের কাছে চলে এসেছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে চলমান অস্থিরতা কি ভারতের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিশ্লেষক মেহেদী মাহবুব বলেন,
যে কারো জন্যই পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের আধিপত্য খর্ব করা কঠিন হবে। কারণ বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদী। কারখানাগুলো ইতিমধ্যেই আবার চালু হতে শুরু করেছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখনও তার প্রতিযোগিদের তুলনায় বেশি সুবিধা ভোগ করছে। শ্রম খরচ অন্যান্য জায়গার তুলনায় কম। ভারতের বিপরীতে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পায়। সর্বোপরি বাংলাদেশ এখনো তার বড় অর্ডারগুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুত।
এই মুহূর্তে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য ভারতের নেই বলে জানিয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রপ্তানির মূল্য কমেছে ১৫ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ ।
এদিকে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ভারতের পোশাক খাতের এই দুরবস্থার পেছনে সুরক্ষাবাদী নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। ভারতে পোশাক ও বস্ত্র আমদানিতে গড় শুল্ক ২০১৭ সালের পর ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে পোশাক উৎপাদনের খরচও বেড়েছে।
অন্যদিকে চীনের স্বল্পমূল্যের পোশাক উৎপাদনে যে ভাটা শুরু হয়েছে। সেটাই ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ হতে পারে । তবে এখানেও ভারতকে বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে, চীনের স্বল্পমূল্যে পোশাক উৎপাদন কমে যাওয়ায়, সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। সেই সঙ্গে পোশাকের মান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরের দিকে যেতে হলে, মানের উন্নতি করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই লক্ষ্য আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। তবে সেটা করতে হলে অর্থনীতিতে আরো বৈচিত্র আনতে হবে