কবে বদলাবেন পোশাক খাতের মালিকেরা

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বয়স ৪৫ বছর। ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস এই পোশাক খাত। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা। একক দেশ হিসেবে রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এত কিছু হলেও কেবল একটি জিনিসই বদলায়নি। আর তা হলো পোশাক মালিকদের আচরণ ও মনোভাব। এখনো পোশাক খাত পরিচালিত হয় সনাতন কায়দায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমনই কেবল শিখেছে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিকভাবে পোশাক মালিকেরা এখন এতটাই প্রভাবশালী, যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেদের স্বপক্ষে আনতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি শেখেনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এই সময়ের উপযোগী হতে হলে পোশাক খাত পরিচালনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য দরকার সংস্কার। কাজটি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। কারণ পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

পোশাক খাতের মালিক সংগঠন দুটি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদে ছিলেন টানা ১৪ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে একবার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছিলেন, বাকি পাঁচবার সভাপতি হন সমঝোতার মাধ্যমে।
তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতেন তিনি, তাঁর ভাই শামীম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সেলিম ওসমানের প্রধান কাজই ছিল সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখা। তাঁদের দাপটে বিকেএমইএ ছিল একটি নামসর্বস্ব সংগঠন, শিল্পের স্বার্থে কোনো ভূমিকা ছিল না।

অন্যদিকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট পদ মানেই হচ্ছে সংসদ সদস্য বা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রবেশ করা। ফলে তাদেরও মূল কাজ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া। এখানে কাজ করে কেবল সরকার স্বার্থ ও মালিক স্বার্থ।
২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৩ জন পোশাক মালিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিজিএমইএ সংবর্ধনা দিয়েছিল নির্বাচিতদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। প্রয়াত আনিসুল হক পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিজিএমইএর শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে যায়। আনিসুল হক প্রয়াত হলে নতুন মেয়র হন বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরাই এ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন, সবাই মেয়র, সংসদ সদস্য অথবা দলে বড় পদ পেয়েছেন। যেমন ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের সভাপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা থেকে ও এর পরের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরের সভাপতি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি এখন পলাতক। এরপরের টানা চার বছরের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৫-০৬ সময়ের সভাপতি টিপু মুনশিও প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আরও অনেক আগে দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রীও ছিলেন রেদোয়ান আহমেদ। তারা বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।

বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মান্নান কচি নামে পরিচিত বিজিএমইএর এই নেতা গত প্রায় এক যুগ ধরেই কমিটিতে থাকতেন। সক্রিয় রাজনীতি করা মান্নান কচিকে কমিটিতে রাখাই হতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য।

গত ৪৫ বছরে বিজিএমইএ একটি কাজই ভালোভাবে শিখেছে, আর তা হলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আন্দোলন দমন, মজুরির দাবি যতটা কম রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা এবং সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন কিছু শ্রমিকনেতাও। যারা অর্থের বিনিময়ে মালিকদের সমর্থন করেন। বিশেষ করে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটেছে।

আসলে বিজিএমইএ বা ব্যবসায়ীদের মূল সংগঠন এফবিসিসিআই মূলত ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী শাখা। চেম্বারগুলোও তা–ই। সুতরাং সংস্কার করতে হবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোরই। তাহলেই ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার কমে আসবে।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের বয়স ৪৫ বছর। ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয়ের উৎস এই পোশাক খাত। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা। একক দেশ হিসেবে রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয়।

দীর্ঘ ৪৫ বছরে এত কিছু হলেও কেবল একটি জিনিসই বদলায়নি। আর তা হলো পোশাক মালিকদের আচরণ ও মনোভাব। এখনো পোশাক খাত পরিচালিত হয় সনাতন কায়দায়। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন দমনই কেবল শিখেছে এই খাতের সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিকভাবে পোশাক মালিকেরা এখন এতটাই প্রভাবশালী, যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেদের স্বপক্ষে আনতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না।

অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক সব পথ বন্ধ হওয়ায় পোশাক খাতের শ্রমিকেরাও দাবি আদায়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো পদ্ধতি শেখেনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এই সময়ের উপযোগী হতে হলে পোশাক খাত পরিচালনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য দরকার সংস্কার। কাজটি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। কারণ পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখা যাবে না।

পোশাক খাতের মালিক সংগঠন দুটি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি পদে ছিলেন টানা ১৪ বছর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে প্রথম সভাপতি হন তিনি। এর মধ্যে ২০১২ সালে একবার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছিলেন, বাকি পাঁচবার সভাপতি হন সমঝোতার মাধ্যমে।
তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতেন তিনি, তাঁর ভাই শামীম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সেলিম ওসমানের প্রধান কাজই ছিল সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখা। তাঁদের দাপটে বিকেএমইএ ছিল একটি নামসর্বস্ব সংগঠন, শিল্পের স্বার্থে কোনো ভূমিকা ছিল না।

অন্যদিকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট পদ মানেই হচ্ছে সংসদ সদস্য বা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রবেশ করা। ফলে তাদেরও মূল কাজ সরকারকে সমর্থন করে যাওয়া। এখানে কাজ করে কেবল সরকার স্বার্থ ও মালিক স্বার্থ।
২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৩ জন পোশাক মালিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন বিজিএমইএ সংবর্ধনা দিয়েছিল নির্বাচিতদের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক তখন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। প্রয়াত আনিসুল হক পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। এই ঘটনায় বিজিএমইএর শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি নতুন দরজা খুলে যায়। আনিসুল হক প্রয়াত হলে নতুন মেয়র হন বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরাই এ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন, সবাই মেয়র, সংসদ সদস্য অথবা দলে বড় পদ পেয়েছেন। যেমন ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ের সভাপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা থেকে ও এর পরের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ঢাকার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরের সভাপতি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যিনি এখন পলাতক। এরপরের টানা চার বছরের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৫-০৬ সময়ের সভাপতি টিপু মুনশিও প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আরও অনেক আগে দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও রেদোয়ান আহমেদ বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রীও ছিলেন রেদোয়ান আহমেদ। তারা বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত।

বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মান্নান কচি নামে পরিচিত বিজিএমইএর এই নেতা গত প্রায় এক যুগ ধরেই কমিটিতে থাকতেন। সক্রিয় রাজনীতি করা মান্নান কচিকে কমিটিতে রাখাই হতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য।

গত ৪৫ বছরে বিজিএমইএ একটি কাজই ভালোভাবে শিখেছে, আর তা হলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আন্দোলন দমন, মজুরির দাবি যতটা কম রাখা যায় তার ব্যবস্থা করা এবং সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন কিছু শ্রমিকনেতাও। যারা অর্থের বিনিময়ে মালিকদের সমর্থন করেন। বিশেষ করে মজুরিকাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটেছে।

আসলে বিজিএমইএ বা ব্যবসায়ীদের মূল সংগঠন এফবিসিসিআই মূলত ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ী শাখা। চেম্বারগুলোও তা–ই। সুতরাং সংস্কার করতে হবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোরই। তাহলেই ব্যবসার স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার কমে আসবে।

লেখক থেকে আরো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Advertismentspot_img

সাম্প্রতিক সংবাদ

আরও কত বছর চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে...

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকার মান কমে যাওয়ার পেছেনে বেশ কিছু...

প্যারিসে গাড়ির প্রদর্শনীতে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির আধিপত্য

চীনা পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে বরাবরই শুল্ক আরোপের চর্চা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এই ধারাবাহিকতায় চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে আগামী পাঁচ বছরে শুল্ক ১০...

সর্বশেষ খবরের সাথে আপ টু ডেট থাকতে চান?

আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই! আপনার বিবরণ পূরণ করুন এবং আমরা আমাদের সকল আপডেট আপনাকে জানাবো।