গত জুলাই থেকে চলমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক্রেতারা সফর পিছিয়ে দিয়েছেন। অনেকে কারখানা পরিদর্শন বাতিল করেছেন। ফলে আসন্ন মৌসুমে কার্যাদেশ কমেছে।
গত জুলাই ও আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বরে ক্রিসমাসের সময় পশ্চিমের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রির সেরা মৌসুমই নয়, আগামী শরৎ ও শীতের জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার ব্যস্ততম মাস।
দুর্ভাগ্যবশত এমন সময়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজিরবিহীন অবনতির হয়। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করলে পোশাক তৈরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর কয়েকটি খাতের শ্রমিকদের কাছ থেকে নানা দাবি উঠতে শুরু করে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করায় প্রায় ১৫ দিন কারখানা বন্ধ থাকে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায়ও কারখানা চালানো যায়নি।
আশুলিয়া, জিরানী, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরের শিল্প এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক রাস্তায় নামেন। কারো কারো বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও আগুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এরপর মালিকরা অস্থিরতা এড়াতে ও সম্পত্তি রক্ষায় একের পর এক কারখানা বন্ধ করে দেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে।পুলিশের ওপর হামলার কারণে শিল্প পুলিশের সদস্যরা শিল্প এলাকায় টহল দেওয়া বন্ধ রাখে।
এ ছাড়াও, সে সময় সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসনে রদবদল হচ্ছিল। প্রায় সব থানা অকার্যকর হয়ে পড়েছিলফলে মালিকরা কারখানা চালাতে সাহস পাননি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ ও ‘ঝুট’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির বিজিএমইএ সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল মুহাম্মদ মো. মঈন খান অস্থিরতার তিন কারণ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো: বহিরাগতদের উসকানি, শ্রমিকদের দাবি ও ঝুট বাণিজ্য দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব।
‘সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকটি কারখানায় চার শতাধিক শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক্সের মাধ্যমে শ্রমিকদের উপস্থিতি নিবন্ধন করায় কালো তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা অন্য কারখানায় চাকরি পাবেন না। ‘মালিকদের উচিত ওই শ্রমিকদের নাম কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।
বর্তমানে আশুলিয়া, সাভার, জিরানী ও জিরাবো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করায় পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে।
দেশের কারখানাগুলো থেকে শুধু যে নির্দিষ্ট সংখ্যক কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে তাই নয়, সময়মতো পণ্য পাঠানো নিশ্চিত করার বিষয়েও উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, রপ্তানিকারকরা বিদেশি ক্রেতাদের বেঁধে দেওয়া সময় পূরণে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে বেশি অর্থ খরচ করে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হবেন।
ঢাকা থেকে ইউরোপের যেকোনো দেশে আকাশপথে পাঠাতে প্রতি কেজি কাপড়ের জন্য চার ডলারের বেশি খরচ করতে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে একই চালান ইউরোপে পাঠাতে খরচ হয় ১০ সেন্টেরও কম