সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ছোট্ট প্রবাল দ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত কারণে, দ্বীপটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানও বটে। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি । বিশ্বের ভুরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দ্বীপটির উপরে আমেরিকার নজর পড়ায়। একে নিয়ে জলপলা কল্পনা বাড়ছে প্রতিদিন।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল বা প্রবাল দ্বীপ। ৪০ হাজার বছর পূর্বে হিমাবাহু যুগে , এই প্রবাল দ্বীপটির উত্থান শুরু হয়। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, এটি ছিল টেকনাফেরি একটি বর্ধিত অংশ। পরবর্তীতে ধীরে-ধীরে দ্বীপটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন এর দক্ষিণের অংশ জেগে ওঠে। এবং পরবর্তী ২০০ বছরে বর্তমান সেন্টমার্টিন এর পুরো অংশ সমুদ্রের উপরে দৃশ্যমান হয়।

ঐতিহাসিকদের ধারণা, প্রায় ২৫০ বছর আগে সর্বপ্রথম আরব বণিকদের চোখে পড়ে এই দ্বীপটি। তারা এর নাম দেয় জাজিরা। যেটিকে তারা সমুদ্রযাত্রায় বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো।
১৮৯০ সালের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। সে সময় এই দ্বীপে, প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ ছিল বলে, স্থানীয়রা একে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকতো।

১৯০০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ভূমি জরিপের সময় দ্বীপটিকে পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নাম রাখা হয় , সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।

টেকনাফ শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং মায়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দীপ্তির অবস্থান মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছি। এই প্রণালীটি ভারত মহাসাগরকে, প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে।
এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত সামুদ্রিক জলপথ। কারণ এই পথ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে , তেল নিয়ে নিয়ে আসে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ এশিয়ার অনেক দেশ। তাই এই পথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো।

এছাড়াও সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি ভৌগলিকভাবে মায়ানমার ও ভারতের জলসিমার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়। উভয় দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে , দ্বীপটির আশপাশের অঞ্চল জুড়ে।
ভারত তাদের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা অনেক দিন ধরেই , কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে, সে আলোচনা ফলপুষ হয়নি। তবে বন্দরটির সমস্যা সমাধানে। বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। এমনকি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের নতুন মাতারবাড়ি বন্দরেও , বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেয় ভারত সরকার।

তবে শুধু , বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেনি ভারত। এরই মধ্যে মায়ানমারে ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তারা। কালাদান মাল্টিমডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পন্য সরবরাহ করবে ভারত।
কিন্তু মায়ানমারের সাথে ভারতের এমন সখ্যতা, মেনে নিতে পারেনি তাদের চিরশত্রু চীন। কারণ, মায়ানমারকে চীন বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। এবং ভারতকে দমন করতে দেশটিকে ব্যবহার করতে চায়। তাই মায়ানমারে ভারতের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা রুখতে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম এবং আশপাশের অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চীন।

চীনের কুনমিন থেকে মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ পর্যন্ত, এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলপথ নির্মাণে চিন ব্যাপকভাবে সক্রিয়। এই পথগুলো তৈরি হয়ে গেলে তা আঞ্চলিক বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিতে পারে। তাই কোন সন্দেহ নেই যে, অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকে। দক্ষিণ-পূর্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল।

তাই এ অঞ্চলের উপর নজর রাখতে ভারত-চীন ও মায়ানমারের জন্য, সেন্ট মার্টিন হয়ে উঠতে পারে ট্রাম্প কার্ড। হয়তো সে কারণেই ২০১৮ সালে সেন্ট মার্টিনকে, নিজেদের দেশের সাথে সংযুক্ত করে, মানচিত্র প্রকাশ করে মায়ানমার।
পরবর্তীতে, বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের মূখে, মায়ানমার এটিকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে দুঃখ প্রকাশ করে। তবে অনেক বিশ্লেষকদের মতে, বন্ধু রাষ্ট্র চীনের ইন্ধনেই, এমন কাণ্ড করেছিল। রাজনৈতিকভাবে অস্থির দেশটি।

তবে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায়। তা নজর কেড়ে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটি চীনকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। এবং নব্য বিশ্বশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানকে দমন করতে চায়। তাই ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায়। এ অঞ্চলে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে এই অঞ্চলে নৌবহরের উপস্থিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে। সাময়িক শক্তিও বৃদ্ধি করতে চাই যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে, নৌঘাঁটি তৈরি করার জন্য। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হতে পারে আদর্শ।

শুধু তাই নয়, ভারত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাটি দিয়েগো গার্সিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নৌঘাঁটি, ওকানিওয়ার কাছে অবস্থিত হওয়ায়। সেন্ট মার্টিন থেকে রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার সুবিধাজনক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র ভারত ও জাপানকে। চীনের হুমকি থেকে স্বস্তি দিতে। সেন্ট মার্টিনকে যুক্তরাষ্ট্র। একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

তাছাড়া, সামরিক বিবেচনায় ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং চীন। সকল রাষ্ট্রই সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি। তাই, দ্বীপটি দখলে নিয়ে, সেখানে দূরপাল্লার কামান, রকেট , ড্রোন বা মিশাইলের মাধ্যমে। আশপাশের সকল রাষ্ট্রে আক্রমণ করা সম্ভব।
জনবসতি কম হওয়ায়। সেন্টমার্টিনে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি বা খরচ না করেই, ঘাটি নির্মাণ করা যাবে। আর ঘাঁটি হয়ে গেলে। দীর্ঘদিন গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা। নৌবহর থেকে জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার, বিমান এম্বুলেন্স সহজেই নামতে পারবে এই দ্বীপে। সবকিছু বিবেচনায়, সেন্ট মার্টিনে মার্কিন ঘাটি নির্মাণের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

সেন্টমার্টি নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা, প্রথম শোনা যায়, ২০১৮ সালের দিকে। সে সময় অনেকেই সন্দেহ করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পেতে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি, এই বিশ্বমোড়লের হাতে, তুলে দিতে পারে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে, মায়ানমার ও তাদের মিত্র চীনের উপরে, চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে অনেকেই মনে করতেন। কিন্তু তখন, বিষয়টি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি।

এর প্রায় পাঁচ বছর পর। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন। একটি বিশেষ দেশ সেন্ট মার্টিন দখলে নিতে। তার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি তখন, কোন দেশের নাম না নিলেও। অভিযোগের আঙ্গুল উঠে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, বিবৃতি দিয়ে। এমন কিছু সম্ভাবনা অস্বীকার করে। তারা কখনোই সেন্টমার্টিন নিয়ে আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি।

সব মিলিয়ে, সেন্টমার্টিন নিয়ে, এক ঘোলাটে পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, দ্বীপটি দারুন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভবিষ্যৎ কি দাঁড়াবে। তা নিয়ে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অপূর্ব সুন্দর দ্বীপটিতে। বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতি চায়না কেউই। তাই, সেন্টমার্টিন চিরকাল এক, সৌন্দর্যময় দ্বীপ হয়ে থাকুক। এমনটাই কামনা করে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশীরা

সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি ছোট্ট প্রবাল দ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত কারণে, দ্বীপটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানও বটে। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি । বিশ্বের ভুরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দ্বীপটির উপরে আমেরিকার নজর পড়ায়। একে নিয়ে জলপলা কল্পনা বাড়ছে প্রতিদিন।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল বা প্রবাল দ্বীপ। ৪০ হাজার বছর পূর্বে হিমাবাহু যুগে , এই প্রবাল দ্বীপটির উত্থান শুরু হয়। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, এটি ছিল টেকনাফেরি একটি বর্ধিত অংশ। পরবর্তীতে ধীরে-ধীরে দ্বীপটি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন এর দক্ষিণের অংশ জেগে ওঠে। এবং পরবর্তী ২০০ বছরে বর্তমান সেন্টমার্টিন এর পুরো অংশ সমুদ্রের উপরে দৃশ্যমান হয়।

ঐতিহাসিকদের ধারণা, প্রায় ২৫০ বছর আগে সর্বপ্রথম আরব বণিকদের চোখে পড়ে এই দ্বীপটি। তারা এর নাম দেয় জাজিরা। যেটিকে তারা সমুদ্রযাত্রায় বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো।
১৮৯০ সালের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। সে সময় এই দ্বীপে, প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ ছিল বলে, স্থানীয়রা একে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকতো।

১৯০০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ভূমি জরিপের সময় দ্বীপটিকে পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নাম রাখা হয় , সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।

টেকনাফ শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং মায়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই দীপ্তির অবস্থান মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছি। এই প্রণালীটি ভারত মহাসাগরকে, প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে।
এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত সামুদ্রিক জলপথ। কারণ এই পথ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে , তেল নিয়ে নিয়ে আসে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ এশিয়ার অনেক দেশ। তাই এই পথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো।

এছাড়াও সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি ভৌগলিকভাবে মায়ানমার ও ভারতের জলসিমার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়। উভয় দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে , দ্বীপটির আশপাশের অঞ্চল জুড়ে।
ভারত তাদের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা অনেক দিন ধরেই , কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, চট্টগ্রাম বন্দরের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে, সে আলোচনা ফলপুষ হয়নি। তবে বন্দরটির সমস্যা সমাধানে। বিশাল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। এমনকি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের নতুন মাতারবাড়ি বন্দরেও , বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেয় ভারত সরকার।

তবে শুধু , বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে থাকেনি ভারত। এরই মধ্যে মায়ানমারে ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তারা। কালাদান মাল্টিমডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট গড়ে তুলেছে। এর মাধ্যমে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পন্য সরবরাহ করবে ভারত।
কিন্তু মায়ানমারের সাথে ভারতের এমন সখ্যতা, মেনে নিতে পারেনি তাদের চিরশত্রু চীন। কারণ, মায়ানমারকে চীন বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। এবং ভারতকে দমন করতে দেশটিকে ব্যবহার করতে চায়। তাই মায়ানমারে ভারতের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা রুখতে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম এবং আশপাশের অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চীন।

চীনের কুনমিন থেকে মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ পর্যন্ত, এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলপথ নির্মাণে চিন ব্যাপকভাবে সক্রিয়। এই পথগুলো তৈরি হয়ে গেলে তা আঞ্চলিক বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিতে পারে। তাই কোন সন্দেহ নেই যে, অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকে। দক্ষিণ-পূর্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল।

তাই এ অঞ্চলের উপর নজর রাখতে ভারত-চীন ও মায়ানমারের জন্য, সেন্ট মার্টিন হয়ে উঠতে পারে ট্রাম্প কার্ড। হয়তো সে কারণেই ২০১৮ সালে সেন্ট মার্টিনকে, নিজেদের দেশের সাথে সংযুক্ত করে, মানচিত্র প্রকাশ করে মায়ানমার।
পরবর্তীতে, বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদের মূখে, মায়ানমার এটিকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে দুঃখ প্রকাশ করে। তবে অনেক বিশ্লেষকদের মতে, বন্ধু রাষ্ট্র চীনের ইন্ধনেই, এমন কাণ্ড করেছিল। রাজনৈতিকভাবে অস্থির দেশটি।

তবে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায়। তা নজর কেড়ে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটি চীনকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে। এবং নব্য বিশ্বশক্তি হিসেবে চীনের উত্থানকে দমন করতে চায়। তাই ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায়। এ অঞ্চলে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে এই অঞ্চলে নৌবহরের উপস্থিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে। সাময়িক শক্তিও বৃদ্ধি করতে চাই যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে, নৌঘাঁটি তৈরি করার জন্য। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হতে পারে আদর্শ।

শুধু তাই নয়, ভারত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাটি দিয়েগো গার্সিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নৌঘাঁটি, ওকানিওয়ার কাছে অবস্থিত হওয়ায়। সেন্ট মার্টিন থেকে রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার সুবিধাজনক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র ভারত ও জাপানকে। চীনের হুমকি থেকে স্বস্তি দিতে। সেন্ট মার্টিনকে যুক্তরাষ্ট্র। একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

তাছাড়া, সামরিক বিবেচনায় ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং চীন। সকল রাষ্ট্রই সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি। তাই, দ্বীপটি দখলে নিয়ে, সেখানে দূরপাল্লার কামান, রকেট , ড্রোন বা মিশাইলের মাধ্যমে। আশপাশের সকল রাষ্ট্রে আক্রমণ করা সম্ভব।
জনবসতি কম হওয়ায়। সেন্টমার্টিনে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি বা খরচ না করেই, ঘাটি নির্মাণ করা যাবে। আর ঘাঁটি হয়ে গেলে। দীর্ঘদিন গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা। নৌবহর থেকে জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার, বিমান এম্বুলেন্স সহজেই নামতে পারবে এই দ্বীপে। সবকিছু বিবেচনায়, সেন্ট মার্টিনে মার্কিন ঘাটি নির্মাণের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

সেন্টমার্টি নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা, প্রথম শোনা যায়, ২০১৮ সালের দিকে। সে সময় অনেকেই সন্দেহ করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পেতে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি, এই বিশ্বমোড়লের হাতে, তুলে দিতে পারে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে, মায়ানমার ও তাদের মিত্র চীনের উপরে, চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে অনেকেই মনে করতেন। কিন্তু তখন, বিষয়টি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি।

এর প্রায় পাঁচ বছর পর। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন। একটি বিশেষ দেশ সেন্ট মার্টিন দখলে নিতে। তার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি তখন, কোন দেশের নাম না নিলেও। অভিযোগের আঙ্গুল উঠে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, বিবৃতি দিয়ে। এমন কিছু সম্ভাবনা অস্বীকার করে। তারা কখনোই সেন্টমার্টিন নিয়ে আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি।

সব মিলিয়ে, সেন্টমার্টিন নিয়ে, এক ঘোলাটে পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, দ্বীপটি দারুন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভবিষ্যৎ কি দাঁড়াবে। তা নিয়ে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অপূর্ব সুন্দর দ্বীপটিতে। বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতি চায়না কেউই। তাই, সেন্টমার্টিন চিরকাল এক, সৌন্দর্যময় দ্বীপ হয়ে থাকুক। এমনটাই কামনা করে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশীরা

লেখক থেকে আরো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Advertismentspot_img

সাম্প্রতিক সংবাদ

আরও কত বছর চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে...

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, টাকার মান কমে যাওয়ার পেছেনে বেশ কিছু...

প্যারিসে গাড়ির প্রদর্শনীতে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির আধিপত্য

চীনা পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে বরাবরই শুল্ক আরোপের চর্চা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এই ধারাবাহিকতায় চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে আগামী পাঁচ বছরে শুল্ক ১০...

সর্বশেষ খবরের সাথে আপ টু ডেট থাকতে চান?

আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই! আপনার বিবরণ পূরণ করুন এবং আমরা আমাদের সকল আপডেট আপনাকে জানাবো।