যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তারা বলছে, গত নভেম্বর-মার্চে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
অন্যদিকে গত নভেম্বর-মার্চে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ইইউতে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। কিন্তু রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান, শহিদউল্লাহ আজিম, নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
ফারুক হাসান বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) আমরা সভা করেছি। তাঁদের কাছে আমরা চলতি বছরের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশের প্রাক্কলন জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমাদের খুব একটা আশাব্যঞ্জক প্রাক্কলন দিতে পারেননি। বরং তাঁরা ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে খুচরা বিক্রিতে মন্দাভাব, পণ্য মজুত থাকা ও সরবরাহব্যবস্থায় বিরাজমান সংকটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখছেন।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশের অন্যান্য রপ্তানি খাতে পোশাকশিল্পের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাতে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। আমরা দুঃখজনকভাবে লক্ষ করছি, আজকাল কিছু থিঙ্কট্যাংক (চিন্তাশীল গোষ্ঠী) পোশাকশিল্পের অর্জনে এতটাই তৃপ্ত যে তারা মনে করছে, এই শিল্পে আর সরকারি সহায়তার প্রয়োজন নেই। তারা ২০০৪ সালে বলেছিল, কোটা বিলুপ্ত হওয়ার পর এ দেশে আর পোশাকশিল্প টিকে থাকবে না। কিন্তু উদ্যোক্তারা তা ভুল প্রমাণ করেছেন। ফলে এসব তত্ত্বকথা ও বিশ্লেষণে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং কীভাবে এই শিল্পকে আরও সহায়তা দেওয়া যায়, সেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।’
ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘সরকারের সহায়তা পেলে আমরা অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী অবদান রাখব। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ হলে ২০২৬ সালের পর নগদ প্রণোদনার বিষয়ে বিধিনিষেধ আসবে। তাই তার আগপর্যন্ত আমরা যদি বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় বিনিয়োগ বাড়াতে পারি। সেটি হবে আমাদের জন্য সময়োপযোগী কৌশল। পোশাকশিল্পে বহুমুখীকরণের অনেক সুযোগ আছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির হিস্যা বর্তমানে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটিকে ১২ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।’
আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত তা কার্যকর রাখার দাবি জানান বিজিএমইএর সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার, নন-কটন পোশাক রপ্তানিতে ১০ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দাবি করেন।