ঢেউ লেগেছে তৈরি পোশাকশিল্পে

0
70

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের জন্য এক দশকের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টায় পুরোপুরি সফলতা না এলেও অগ্রগতি আছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশের গন্তব্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ জোটে তখন যুক্তরাজ্যও ছিল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং কানাডায় ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হতো। তার মানে, রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের সাড়ে ৯২ শতাংশের গন্তব্য ছিল প্রচলিত বাজারগুলো। সে সময় নতুন বাজারের হিস্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ।

দেড় দশকের ব্যবধানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের হিস্যা বেড়ে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাতে প্রচলিত বাজারগুলোর ওপর অতিনির্ভরতা কমে আসছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাজার হিস্যা ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশে নেমেছে।

একইভাবে কানাডার হিস্যা ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে গত বছর ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে। যদিও ইইউর হিস্যা খুব একটা কমেনি, বেড়েছে যুক্তরাজ্যের হিস্যা। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে বস্ত্র ও পোশাক খাতকে ২৫ শতাংশ নগদ সুবিধা দেওয়া হয়।

গত দেড় দশকে রানা প্লাজা ধস ও করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০০৯ সালে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ১৮৯ কোটি ডলার। বিদায়ী ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলার।

বিদায়ী বছরে ইইউতে ২ হাজার ৩৩৮, যুক্তরাষ্ট্রে ৮২৭, যুক্তরাজ্যে ৫৩৪, কানাডায় ১৫১ এবং নতুন বাজারে ৮৮৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ২০২৩ সালে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশের মতো। ইইউতে দেড় শতাংশ, কানাডায় ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।


নতুন বাজারে বড় চমক জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘদিন ধরে জাপানের বাজারে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের ওপরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর এই বাজারে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৬৮ কোটি ডলার। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অথচ এই বাজারে ২০০৯ সালে রপ্তানি ছিল ১১ কোটি ডলার।

এর মানে, জাপানে গত ১৫ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১৫ গুণ। বিদায়ী বছরে অস্ট্রেলিয়াতেও তৈরি পোশাক রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে এই বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭ কোটি ডলারের। গত বছর সেটি ১২৮ কোটি ডলার হয়েছে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৩৮ শতাংশ। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে না পৌঁছালেও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

২০০৯ সালে বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৮০ লাখ ডলারের। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সালে সেই রপ্তানি বেড়ে ৫১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এরপরের বছর করোনার কারণে রপ্তানি কমে। গত দুই বছর দেশটিতে পোশাক রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ৯০ ও ৯২ কোটি ডলার। বিদায়ী বছরে এই বাজারে প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ২০ শতাংশ। নতুন বাজারগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে আরও আছে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর রাশিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কিছুটা কমে।

গত বছর রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি হয় ৪৮ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৮ সালে বাজারটিতে রপ্তানি হয়েছিল ২৪ কোটি ডলারের। গত বছর সেটি বেড়ে ৫৯ কোটি ডলার হয়েছে। এ ছাড়া চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে