রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। হোমটেক্সটাইলসহ অন্যান্য সমজাতীয় পণ্য হিসাবে নিলে পোশাক থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৭ শতাংশ। স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী পোশাকের কাঁচামালের দেশীয় জোগান এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের চেয়ে আমদানিতে দাম কম পড়ছে। এ কারণে তৈরি পোশাক উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন রপ্তানিকারকরা। এতে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে দর প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না দেশীয় বস্ত্রকল। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৩৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। ক্রমাগত আর্থিক লোকসানে অন্তত ৫০টি বড় বস্ত্রকল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কলের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ বিকল্প পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে বেকার।
শিল্পে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব এবং দুই বছর আগের তুলনায় উপকরণের তিন গুণ দামের কারণে স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কেজিতে ২৪ টাকা। গত জুলাই থেকে মজুরি বেড়েছে বস্ত্র খাতে। এ বাবদ কেজিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে আরও ২৫ টাকা। এই দুই বাড়তি ব্যয়ের কারণে এক কেজি সুতা উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে ৪৯ টাকা। কাপড়ের ক্ষেত্রেও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ চিত্রের বিপরীতে সুতা ও কাপড় আমদানির উৎস দেশগুলোর চিত্র একেবারেই বিপরীত। নিজস্ব তুলা, গ্যাস-বিদ্যুতের সহনীয় দামের কারণে চীন ও ভারতে ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এর ওপর এসব দেশ বিভিন্ন কায়দায় প্রণোদনা দিচ্ছে, গড়ে যার হার ২০ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই দফায় বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।
২ থেকে ৩ সেন্ট কম পেলেই বিদেশি ব্র্যান্ড-ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়। পোশাকের রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তুমুল এ দর প্রতিযোগিতার কারণে বাধ্য হয়ে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন–এই ছয় মাসে আগের একই সময়ের চেয়ে সুতা আমদানি বেশি হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৫ টন। এ সময়ে সুতা ও কাপড়ের কাঁচামালের মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৯ টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৪ টন। বাড়তি আমদানিতে ৫ হাজার ৫৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বস্ত্র খাতের প্রধান প্রতিযোগী ভারত দেশটির বস্ত্র ও পোশাক খাতকে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে। বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে প্রায় সব খাতে। জমির দাম, ব্যাংক সুদ, বিদ্যুৎ, শ্রমিক মজুরি, শ্রমিকদের বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্পের মূলধন–এসব খাতে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ ছাড়া স্ট্যাম্প ডিউটিসহ সরকারি বিভিন্ন ফি মওকুফ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটক, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার–সব প্রদেশের বস্ত্র খাত বিভিন্ন হারে প্রণোদনা ভোগ করছে। বিহারে কারখানা স্থাপনের উপযোগী জমি তৈরি করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলধনি যন্ত্রের মোট মূল্যের ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
প্রতিযোগী দেশে যখন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তখন দেশে বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। জাহাজীকৃত রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দু’দফায় ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে রপ্তানিতে দেশীয় বস্ত্রের ওপর ২ শতাংশ নগদ সহায়তা ছিল, যা আধা শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত নগদ সহায়তা ৪ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা হয়।
দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি হিসেবে জোটে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি কাতার থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। অবশ্য উত্তরণের পর অতিরিক্ত তিন বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২০২৯ সালের পর নতুন স্কিম জিএসপি প্লাস সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, বস্ত্র ও পোশাকের স্থানীয় বাজারের আকার ১৪ হাজার কোটি টাকা। কাপড়ের চাহিদা বছরে ৮ বিলিয়ন মিটার। রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড়ের পাশাপাশি স্থানীয় বস্ত্রের শতভাগ চাহিদা দেশীয় বস্ত্রকল মেটাতে সক্ষম। বিটিএমএর সদস্য কারখানা ৫১৯টি। এর মধ্যে শতভাগ স্থানীয় বাজারের জন্য সুতা তৈরি করে ২০০ কারখানা স্থানীয় বস্ত্রের জোগান দিয়ে থাকে। বিদেশি বস্ত্রের অসম দর এবং অবৈধ প্রবেশে স্থানীয় বস্ত্র খাত সংকটে পড়েছে।
অনিশ্চয়তায় বস্ত্র খাত
রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। হোমটেক্সটাইলসহ অন্যান্য সমজাতীয় পণ্য হিসাবে নিলে পোশাক থেকে আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৭ শতাংশ। স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী পোশাকের কাঁচামালের দেশীয় জোগান এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের চেয়ে আমদানিতে দাম কম পড়ছে। এ কারণে তৈরি পোশাক উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন রপ্তানিকারকরা। এতে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে দর প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না দেশীয় বস্ত্রকল। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৩৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। ক্রমাগত আর্থিক লোকসানে অন্তত ৫০টি বড় বস্ত্রকল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কলের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ বিকল্প পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে বেকার।
শিল্পে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব এবং দুই বছর আগের তুলনায় উপকরণের তিন গুণ দামের কারণে স্থানীয় সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কেজিতে ২৪ টাকা। গত জুলাই থেকে মজুরি বেড়েছে বস্ত্র খাতে। এ বাবদ কেজিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে আরও ২৫ টাকা। এই দুই বাড়তি ব্যয়ের কারণে এক কেজি সুতা উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে ৪৯ টাকা। কাপড়ের ক্ষেত্রেও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ চিত্রের বিপরীতে সুতা ও কাপড় আমদানির উৎস দেশগুলোর চিত্র একেবারেই বিপরীত। নিজস্ব তুলা, গ্যাস-বিদ্যুতের সহনীয় দামের কারণে চীন ও ভারতে ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এর ওপর এসব দেশ বিভিন্ন কায়দায় প্রণোদনা দিচ্ছে, গড়ে যার হার ২০ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই দফায় বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।
২ থেকে ৩ সেন্ট কম পেলেই বিদেশি ব্র্যান্ড-ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়। পোশাকের রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তুমুল এ দর প্রতিযোগিতার কারণে বাধ্য হয়ে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা স্থানীয় কাঁচামালের বদলে আমদানিতে ঝুঁকছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন–এই ছয় মাসে আগের একই সময়ের চেয়ে সুতা আমদানি বেশি হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৫ টন। এ সময়ে সুতা ও কাপড়ের কাঁচামালের মোট আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৯ টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৪ টন। বাড়তি আমদানিতে ৫ হাজার ৫৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বস্ত্র খাতের প্রধান প্রতিযোগী ভারত দেশটির বস্ত্র ও পোশাক খাতকে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে। বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে প্রায় সব খাতে। জমির দাম, ব্যাংক সুদ, বিদ্যুৎ, শ্রমিক মজুরি, শ্রমিকদের বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্পের মূলধন–এসব খাতে উল্লেখযোগ্য হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ ছাড়া স্ট্যাম্প ডিউটিসহ সরকারি বিভিন্ন ফি মওকুফ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটক, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার–সব প্রদেশের বস্ত্র খাত বিভিন্ন হারে প্রণোদনা ভোগ করছে। বিহারে কারখানা স্থাপনের উপযোগী জমি তৈরি করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলধনি যন্ত্রের মোট মূল্যের ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
প্রতিযোগী দেশে যখন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে তখন দেশে বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। জাহাজীকৃত রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দু’দফায় ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে রপ্তানিতে দেশীয় বস্ত্রের ওপর ২ শতাংশ নগদ সহায়তা ছিল, যা আধা শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত নগদ সহায়তা ৪ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা হয়।
দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসি হিসেবে জোটে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এলডিসি কাতার থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। অবশ্য উত্তরণের পর অতিরিক্ত তিন বছর এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২০২৯ সালের পর নতুন স্কিম জিএসপি প্লাস সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, বস্ত্র ও পোশাকের স্থানীয় বাজারের আকার ১৪ হাজার কোটি টাকা। কাপড়ের চাহিদা বছরে ৮ বিলিয়ন মিটার। রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড়ের পাশাপাশি স্থানীয় বস্ত্রের শতভাগ চাহিদা দেশীয় বস্ত্রকল মেটাতে সক্ষম। বিটিএমএর সদস্য কারখানা ৫১৯টি। এর মধ্যে শতভাগ স্থানীয় বাজারের জন্য সুতা তৈরি করে ২০০ কারখানা স্থানীয় বস্ত্রের জোগান দিয়ে থাকে। বিদেশি বস্ত্রের অসম দর এবং অবৈধ প্রবেশে স্থানীয় বস্ত্র খাত সংকটে পড়েছে।